আমাদের আঁইশমালী গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রায়শই আসতেন।
আমাদের আঁইশমালী গ্রামে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রায়শই আসতেন।
গাংনাপুর থানার আঁইশমালী গ্রাম। কালো পিচের রাস্তা ধরে আঁইশমালী বাজার পার করলেই বাঁ দিকে পড়বে একটি পরিত্যক্ত শিবমন্দির। মন্দিরের পুজোপাঠ কবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, স্মরণ করতে পারেন না এলাকার প্রবীণেরাও। তবে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পথের পাঁচালী'তে এই মন্দিরের ১২৯৪ সনে প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দির আজ পরিত্যক্ত। নিজস্ব চিত্র উল্লেখ মেলে। এক সময়ে বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মুখোপাধ্যায় জমিদারদের তালুক ছিল এই গ্রাম। গ্রামটি নয়-নয় করেও যে তার সাড়ে তিনশো বছরের দীর্ঘ বয়সকাল অতিক্রম করেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিছুটা দূর এগোলেই চোখে পড়বে... অতিক্রম করেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিছুটা দূর এগোলেই চোখে পড়ে বুড়ো অশ্বথের ছায়া-ঘেরা প্রায় একই শৈলির আরও একটি শিবমন্দির। এই মন্দিরের গায়ে অনাদরের ছাপ স্পষ্ট হলেও নিত্য পূজিত হন দেব। মন্দিরের বিপরীতে সে কালের জমিদারিত্বের অস্তিত্বের প্রমাণ আজও বহন করে নিয়ে চলেছে জীর্ণ দালান বাড়ির কঙ্কালনার দেহ। সুউচ্চ মিলানে পথের কাজ ঢাকা পড়ে রয়েছে বর্ষায় গজিয়ে ওঠা সবুজ আগাছায়। এই গ্রামেরই বাসিন্দা গোপালচন্দ্র সমাজপতির পৌত্র সুরেশচন্দ্র সমাজপতির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বিদ্যাসাগরের বড় মেয়ে হেমলতার। এটি দেব বাংলা অভিধানেও এর প্রমাণ মেলে। জানা গিয়েছে, মেয়ের বিয়ের পর এক সময়ে এই গ্রামে প্রায়শই আসতেন।
বড় মেয়ে হেমলতার বিবাহসূত্রে বিদ্যাসাগরের নিয়মিত আনাগোনা ছিল গ্রামে। ইতিহাসের নীরবতায় সেই অধ্যায়ের কথা এখন আর লোকমুখে উচ্চারিত হয় না। যে বিদ্যাসাগর আজও তাঁর বঙ্গসন্তানদের বর্ণের সঙ্গে পরিচয় করান, সেই মানুষটির পারিবারিক এক অধ্যায় বিলীন হয়ে গিয়েছে। ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্মদিনের আগে লিখছেন সুদেব দাস
রিত্যক্ত ভগ্নদশার শিবমন্দিরটির গায়ে তখন পড়ন্ত বিকেলের রোদ্দুর এসে ঠিকরে পড়ছিল। মন্দিরের গায়ে শ্বেতপাথরের ফলকে লেখাগুলো অস্পষ্ট হয়ে এলেও একেবারে বিলীন হয়ে যায়নি। লেখাগুলো পড়তে খানিক কসরত করতে হল। উদ্ধার হওয়া লেখায় স্পষ্ট হল, 'এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠার সময়কাল ১২৯৪ সন। প্রতিষ্ঠাতা বন্দ্যোবংশীর মদনমোহনের পুত্র ভক্ত শ্রীপার্বতী চরণ। গ্রামের এই এলাকাতেই বিয়ে হয়ে এসেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় মেয়ে হেমলতা। সেই সূত্রে বিদ্যাসাগরের নিয়মিত আনাগোনা ছিল এই গ্রামে। অথচ, ইতিহাসের নীরবতায় সেই অজানা
অধ্যায়ের কথা এখন আর লোকমুখে উচ্চারিত হয় না। শুধু থেকে গিয়েছে কিছু জনশ্রুতি আর পৃথিবদ্ধ কিছু
লেখা।
বিদ্যাসাগরের জামাতা সুরেশচন্দ্র সমাজপতি ছিলেন সাহিত্য কল্পদ্রুম' পত্রিকার সম্পাদক। পরবর্তীতে সেই পত্রিকারনামকরণ হয় 'সাহিত্য'। শুভদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “যেটুকু জানা গিয়েছে, বিয়ের কয়েক বছরের মধ্যেই স্বামীহারা হয়েছিলেন হেমলতা। পরবর্তীতে পিতৃগৃহেই ফিরতে হয় বিদ্যাসাগর কন্যাকে। আত্মীয়তার সম্পর্কেই বিদ্যাসাগরের যে ওই গ্রামে যাতায়াত ছিল সে বিষয়ে দ্বিধা নেই।” ইতিহাসপ্রেমী অসীম বিশ্বাস বলেন, "রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহু আগেই বলেছিলেন বাঙালি ইতিহাসবিমুখ জাতি। বিদ্যাসাগরকে নিয়ে তাঁর জন্ম সার্ধশতবর্ষে যতটা আগ্রহ দেখা গিয়েছিল, আল ততটাই অবহেলিত বিদ্যাসাগরের পদচিহ্নের সাক্ষী থাকা এই গ্রাম।" (সংগৃহিত)
Comments
Post a Comment