মোবাইল ফোন : বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম
মোবাইল ফোন : বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্ম
আজ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মোবাইল ফোনের ব্যবহার পৃথিবীতে সব থেকে মারাত্মক নেশা হিসেবে বিবেচিত হবে। বর্তমান প্রজন্ম এর থেকে কিছুটা রেহাই পেলেও পরবর্তী প্রজন্মকে এই নেশা সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করবে।
সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ সাময়িক সময়ের জন্য হয়ে থাকলেও মোবাইল ব্যবহারের নেশা পরবর্তী প্রজন্মকে সম্পূর্ণভাবে গ্রাস করবে। এই নেশা এতটাই মরণাত্মক হবে যে কোন মাদকদ্রব্যের নেশাকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দেবে।
করোনা ভাইরাসের থেকেও এই মোবাইল ভাইরাস হবে আরও মারাত্মক। সমগ্র মানবজাতিকে ধীরে ধীরে এই ভাইরাস ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। বিশেষ করে ৪ থেকে ১৯ বছরের ছেলে-মেয়েরা এই মোবাইল ভাইরাসে আক্রান্ত হবে।
তাদেরকে এই নেশা এমনভাবে আক্রান্ত করবে যে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনে নিয়ে নিলেই তারা যে কোনো অঘটন ঘটাতে পিছুপা হবে না। এমনকি আত্মহত্যার পথও বেছে নিতে দুইবার ভাববে না।
মোবাইল আসক্তির লক্ষণ:
১। ছোটবেলা থেকে মোবাইল ফোন হাতে না দিলে খাবার না খাওয়া।
২। খাবারের পরিমাণ কম কিছু খাওয়া শেষ করতে অনেক সময় নেবে।
৩। পড়তে বসবে কিন্তু মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে না এবং মনটা পড়ে থাকবে মোবাইলের দিকে।
৪। বইয়ের পাতার চোখ থাকবে কিছু কান থাকবে মোবাইলের মেসেজের টিক টিক শব্দের দিকে।
৫। বিদ্যালয় বা টিউশন থেকে ফিরে এসে বই-পত্র সঠিকভাবে স্থানে না রেখে আগে মোবাইল ফোন হাতে নেবে।
৬। শিক্ষক মহাশয় মোবাইলে কিছু পাঠিয়েছেন এই অজুহাত দেখিয়ে মোবাইল ফোন হাতে তুলে নেবে।
৭। পড়তে বসে বারংবার উঠে ফোন চেক করা।
৮। পড়তে পড়তে হঠাৎ গুন গুনিয়ে গান গেয়ে উঠবে বা বিভিন্ন প্রকার অঙ্গ ভঙ্গি করবে
৯। বিদ্যালয়ে বা টিউশনে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে অন্যদের মোবাইলে সময় অপচয় করা।
১৩। ১ থেকে ২ ঘণ্টা একটানা পড়তে পারবে না, সেই ধৈর্য থাকবে না।
১১। পড়তে বসে বার বার উঠবে।
১২। আওয়াজ করে পড়বে না, মনে মনে চুপ-চাপ পড়বে।
১৩। কিছু সময় ব্যবহার করার পর ফোন রেখে দিয়ে আবার ৫/১০ মিনিটের ভিতর ফোন হাতে নেওয়া।
১৪। মোবাইল দেখার সময় এরা এতটায় মোবাইল আসক্ত হবে যে দু-চার বার ডাকলেও উত্তর দেবে না।
১৫। মোবাইল না দিলে অশান্তি করবে এবং এমনকি ঘরের কোন জিনিস পত্র ছুড়ে ফেলে এরা রাগ জাহির করবে।
১৬। ছবি বা সেলফি তোলার খুব আগ্রহী হবে এবং প্রতিদিন অজস্র ছবি তুলবে এবং সেই ছবিগুলি বার বার দেখে সময় কাটাবে।
চরম পরিণতি কী হবে?
১। পরবর্তী প্রজন্ম অনলাইনে পারদর্শী হয়ে উঠলেও অফলাইনে এদের জ্ঞান হবে একদম শূন্য।
২। বড়দের কীভাবে সম্মান করতে হয় সেই বোধ-বুদ্ধি তাদের সম্পূর্ণভাবে বিলোপ ঘটবে।
৩। পড়াশোনা করার কোন আগ্রহ থাকবে না।
৪। AI-এর ফলে শিক্ষকরা তাদের কাছে উপহাসের পাত্র হয়ে উঠবে।
৫। মোবাইল কোনে টাইপ করতে করতে, তারা কাগজ-কলমের ব্যবহার ভুলে যাবে এবং কোন কিছুর বানান করে লিখতে পারবে না।
৬। হাতের লেখা হবে সম্পূর্ণ অবোধগম্য।
৭। চুপ-চাপ মোবাইল ফোনে দেখা এবং কম কথা বলার কারণে এদের বাকযন্ত্রে সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।
৮। আবার গেম খেলার সময় (যারা মোবাইল গেমে আসক্ত) মোবাইলের অন্য পারে থাকা বন্ধুর সঙ্গে অধিক কথা বিনিময়ের জন্য এদের মধ্যে পাগলের কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য পরিলক্ষিত হবে।
৯। মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দৃষ্টি শক্তি খুব কম বয়সেই হারাবে।
১০। একদিন চিকিৎসা বিজ্ঞানে আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে এবং বিজ্ঞানীদেরকে এক সময় এই নেশা থেকে মুক্ত করার জন্য কোন প্রকার ভ্যাকসিন আবিস্কারের কথাও ভাবতে হতে পারে।
১১। এখন যেমন মেন্টাল হাসপাতাল আছে, ভবিষ্যতে মোবাইল ফোন আসক্তদের জন্য পৃথক হাসপাতাল তৈরি করতে হতে পারে।
১২। এদের ধৈর্য শক্তি বলে কিছুই থাকবে না, একটুতেই এরা বিরক্ত হয়ে উঠবে। এই কারণে এরা বিভিন্ন অসামাজিক কাজকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়বে এবং ভবিষ্যতে সমাজ বলে আর কিছুই থাকবে না।
১৩। এরা দিন দিন স্বার্থপর হয়ে উঠবে। ভবিষ্যতে বৃদ্ধা আশ্রমের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে।
১৪। আউটডোর গেমের পরিবর্তে এরা আউটডোর শুটিং করতে বেশি আগ্রহী হবে (সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার উদ্দেশ্যে)।
১৫।ভালো কথা বললেও এরা মেজাজ দেখাবে, কথা বোঝার ক্ষমতা আসতে আসতে হারিয়ে ফেলবে।
১৬।সবসময় নেশাগ্রস্থ মানুষের মতো আচরণ করবে।
১৭।মানসিকভাবে সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে পড়বে।
১৮।মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন এদের ভবিষ্যতেকে ধ্বংস করে দেবে।
করণীয় :
১। ছোট বেলা থেকে খাওয়ার সময় ফোন না দেওয়া।
২। কান্না-কাটি থেকে ভোলানোর জন্য ফোন না দেওয়া।
৩। নিজেদেরকে সন্তানের বিরক্ত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সন্তানের হাতে ফোন তুলে না দেওয়া।
৪। আউটডোর গেমে এদেরকে আগ্রহী করে তুলতে হবে।
৫। পড়াশোনার আগ্রহী করে তুলতে হবে।
৬। হাতে ফোন দেওয়ার পরিবর্তে এদের সঙ্গে মজাদার গল্প শোনানো একান্ত প্রয়োজন।
৭। নিজেদেরকে ফোন থেকে দূরে রাখতে হবে বিশেষ করে এদের সামনে।
৮। মোবাইলের নেশা কাটাতে বরং টিভি দেখানো যেতে পারে (তবে নিয়মিত না), এরা সাধারণত টিভি দেখার নেশা হবে না কারণ টিভিতে নিজের ইচ্ছামত কিছু দেখতে পারবে না, চ্যানেলের ইচ্ছা দেখতে হবে। তবে সবথেকে ভালো হয় যদি বইয়ের প্রতি আগ্রহী করে তুলা যায়।
৯। বিদ্যালয়ে বা টিউশন সেন্টারে তাদেরকে নিয়মিত পাঠাতে হবে যাতে মোবাইল ফোন নেওয়ার সময় কম পায়।
১০। নিয়মিত তাদের নিয়ে কাউন্সেলিংয়ের একান্ত প্রয়োজন।
১১। যাতে যাদের প্রতিভা আছে, সেক্ষেত্রে তাদেরকে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
১২। সবসময় উৎসাহ দিতে হবে, কখনও মনোবল কমে যায় এমন কথা বলা যাবে না।
১৩। সর্বোপরি সকলের সচেতনতা একান্ত প্রয়োজন।
*** সনাতন ঘোষ, ডিরেক্টর অফ ইংলিশ সেন্টার এন্ড ইংলিশ ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল
Comments
Post a Comment